December 25, 2024, 4:38 am

গলাচিপা-দশমিনায় গভীর নলকুপ পেতে আর্থিক লেনদেন না করার আহ্বান এস এম শাহজাদার

Reporter Name
  • Update Time : Wednesday, June 24, 2020,
  • 421 Time View

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ

পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা- দশমিনা) আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা তার আসনে গভীর নলকুপ পেতে সরকারি বরাদ্ধ ৭৫০০ টাকা লাগলেও কিছু মানুষ ২০-২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছি। এ বিষয়ে তার ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্টে গভীর নলকুপ নিয়ে স্মৃতি চারন করে। টিউবওয়েল প্রাপ্যতায় নির্বাচিতদের কারো সাথে অবৈধ লেনদেন করতে নিষেধ করেছেন। সাংসদ তার ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। যা পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল। প্রসঙ্গ: “গভীরনলকূপ” পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু পানিটা হতে হবে বিশুব্ধ। আমাদের গলাচিপা দশমিনাতে এই বিশুদ্ধ পানির উৎস গভীর নলকূপ। এক সময় নলকূপের পাইপের গভীরতা ছিল ৭০০ ফুটের মত এখন স্থান ভেদে তা প্রায় ১০০০ ফুট গভীরতায় যেতে হয়। ভূগভীরস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবার কারণে এখন অধিক গভীরতার প্রয়োজন হয়। এ কারণে পরিবেশ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ যতকম ভূগভীরস্থ পানি ব্যবহার করা যায়। আমরা সচেনতার অভাবে এর ব্যবহার কমানো তো দুরে থাক, পাল্লা দিয়ে পানি অপচয় করি। মনে হয় পানি অধিক খরচের ভিতর কোন পুরস্কার ল্কুায়িত আছে। কিন্তু পরকালে এই পানির প্রত্যেকটা ফোটার ও হিসাব দিতে হবে। যাই হোক, এই গভীর নলকূপের চাহিদা দিনকে দিন বেড়েই চলছে। সরকারও পানি ব্যবহারে সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষে বিভিন্ন প্রকার কাজ করছে এবং বিশুদ্ধ সুপেয় পানির সংস্থান কল্পে গভীর নলকূপের বরাদ্ধ করে যাচ্ছে। এই মূহুর্তে সারাদেশে সরকারী গভীর নলকূপ বরাদ্ধ চলমান রয়েছে। এই নলকূপ সমহারে সকল ইউনিয়নে ওয়াটস্যান কমিটি ও সংসদ সদস্য সমান সংখ্যক নলকূপ বরাদ্ধ দিচ্ছেন। এই নলকূপের জন্য সরকারী অফিসে ভ্যাট সহ ৭,১০০/- (সাত হাজার একশত) টাক জমা দিতে হয়। বেসরকারী ভাবেও এই নলকূপ কিনে বসানো যায়। যার জন্য খরচ হয় মাত্র ৪৫-৫০ হাজার টাকা, যা এখন আমাদের দেশের প্রায় মানুষেরই সাধ্যের মধ্যে। এক সময় নলকূপ ছিল ভীষন অপ্রতুল। কয়েক মাইল পরপর এর দেখা মিলতো। আমার স্পষ্ট মনে আছে নলকূপের পানির জন্য ছোট ডিঙ্গি নৌকা করে দাদার সাথে যেতাম অনেক দুরে। ঐ নৌকায় আমাদের বাড়ীর সকল ঘরের একাধিক কলস থাকতো, কি মিল ছিল! যেই যেত, সেই সকলকে জানাতো পানি আনতে যাবো, কার কার পানি লাগবে, ঘরে ঘরে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতো। একজনই সবার জন্য পানি নিয়ে আসতো। আমি নৌকার চুড়ায় দুই পাশে পা ফেলে গভীর মনোযোগে পানির দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কি অপরূপ ছিল! টাইটানিক সিনেমা দেখার সময় এটা বারবার মনে পড়েছিলো। তবে এই অনুভূতির কাছে টাইটানিক কিছুইনা।চারদিকে শাপলা ফুল, ফরিং জলজ ঘাসের এ চুড়া থেকে ও চুড়ায় উড়ে বসছে। স্ফটিকের মত স্বচ্ছ পানির ভিতর মাছেরা খেলা করছে। অগভীর পানির নিচের মাটি দেখতে পাওয়া যেত। পানির নিচের জীবনও গভীর মমতায় পর্যবেক্ষণ করতাম। শোল, টাকি, কৈ, ফলি, মলা ও আরও কত মাছের খেলা দেখতাম। দাদা নৌকার অপর প্রান্তে বাশের লগি দিয়ে ডিঙ্গি চালাতো আর আমাকে আনন্দ দেয়ার জন্য প্রায়ই দোল দিত। পানিতে কল, কল শব্দ হতো। মৃদু বাতাস, দাদার গলায় গান, পানির শব্দ, বকেরা উড়ে যাওয়া, সাদা সাদা শাপলা ফুল, মাছেদের খেলা আমার কাছে আজও স্মৃতীতে অমলিন। এভাবেই কয়েক মাইল দুর থেকে কলসের পর কলস ভরতাম এবং নিজের জন্য পেটভরে পানি খেয়ে নিতাম। পেটও যেন ছিল একটা পাত্র। এরপর যখন একটু বড় হলাম তখন বাড়ীর দয়জায় নলকূপ আসলো। নলকূপ বসানোর জন্য যখন লোকজন এলো দাদা শহর থেকে আমাকে নিয়ে আসলো বিশাল এই আনন্দের সারথী হবার জন্য। তখন দেখলাম বিশাল লম্বা পাইপ বসিয়ে বেশ কয়েকজন শক্তিশালী মানুষ সার্বক্ষণিক কসরৎ করে যাচ্ছেন। তখন যে আনন্দ পেয়েছিলাম তার স্মরণ হয়েছিল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সময়। যারা নলকূপের কাজ করতো তারা আমাকে দেখলেই বলতো ডালিম ও জিলাপি খাওয়াও, তা হলে পানি মিষ্টি লাগবে, না হলে এই যে গোবর ব্যবহার করছি দেখছো, এই গোবরের গন্ধ আসবে। তখন ডালিম ঐ রকম পাওয়া যেত না, তাই পেয়ারা ও জিলাপি খাইয়েছিলাম। পানি অনেক মিষ্টি হয়েছিল। ঐ নলকূপটি এখন আর নেই। কিছু বছর আগে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে গিয়েছে। কেউ আর ঠিক করানোর চেষ্টা করেনি। কারণ অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কারণে বাড়ীর প্রায় ঘরই নিজেরা নলকূপ বসিয়ে নিয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের পর আবার সবাই মর্টার বসিয়েছে। এখন কেউ আর কোন কিছু শেয়ার করতে চায় না। সবাই কেমন যেন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। সবাই চায় তার নিজের ঘরে নলকূপ। এই বিশাল চাহিদার কারণে নলকূপের জন্যও বিশাল প্রতিযোগিতা। বিশাল প্রতিযোগিতার কারণে প্রায়শই অনেকে বিশাল গুনাহ’র কাজ করে থাকে। আমি শুনেছি এক একটা নলকূপের জন্য ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। যিনি ২০-২৫ হাজার টাকা দিতে পারেন তিনি আর একটু কষ্ট করলে ৪৫-৫০ হাজার টাকায় কারোও ধার না ধরে, নিজে হারাম থেকে দূরে থাকতে পারেন এবং অন্যকেও হারামের প্রলোভনের মধ্যে ব্যর্থ করতে পারেন। আমাদের কাছে আপনাদের মাঝে বিতরণের জন্য সরকার যা কিছু বরাদ্ধ করেন তার সম্পূর্ণ হক আপনাদের। চাহিদার তুলনায় কম হলে ও সামান্য দামের একটা জিনিসের জন্য এতবড় নৈতিক স্থলন একেবারেই কম নয়। আবার ধৈর্য্য ধারণ করলে, সামনে পাওয়াও যেতে পারে। উৎকোচ দেওয়া কিংবা গ্রহন করাটা যে কতবড় লজ্জার তা আমরা অনুধারণ করছিই না বরং এটা বলাটাই যেন কেমন হাস্যকর মনে হয়। ভাই ও বোনেরা সবার কাছে অনুরোধ আপনি নলকূপের জন্য ৭১০০/- টাকা এর বারতি কোন টাকা দিলে যেনে রাখুন, আপনি প্রতারিত হচ্ছেন। আর যদি জেনে বুঝে এটা করেন তাহলে পরকালে ঐ নলকূপের প্রতিটা পানির ফোটা এক একটা গুনাহ বলে গন্য হবে। নলকূপ যা এসেছে তাতো না বসিয়ে উপায় নাই। কাজেই আপনারা উৎকোচ না দিলেও ঐ নলকূপগুলো বসানো হবে। আর যারা উৎকোচ চায় তারা আপনার, তার পরিবারের, সমাজের ও দেশের দুশমন। আপনাদের উচিত তার মুখে, ছবিতে, নামের উপর থুথু নিক্ষেপ করা। আর সে যদি কোন জনপ্রতিনিধি হয় তাহলে জুতা পেটা করা। অথবা আপনারা যারা উৎকোচ দিয়ে নলকূপ নিচ্ছেন তাদের প্রতিও সমান ঘৃণা। আপনি বলতে পারেন ২০ হাজার টাকা না দিলে নলকূপ পাবেন না। তর্কের খাতিরে মানছি। কিন্তু এর সাথে আর ২০-২৫ হাজার টাকা

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71